Friday, May 27, 2016

Love story-



গাবতলীতে নেমে রিক্সা ঠিক করছি এই সময়ে অনীনদিতার এস এম এস এসে হাজির । 
চলে এসেছ ? 
আমি মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারি না এই মেয়েটার আচরনে । এই মেয়েটাকে কখনও কিছু বলতে হয় না । কিভাবে জানি সব কিছু টের পেয়ে যায় । 
প্রতিদিন সকাল বেলা যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে ঠিক তখনই অনীনদিতার গুডমর্নিং এসে হাজির হয় । এমন না যে প্রতিদিন আমার ঘুম একই সময় ভাঙ্গত । কোন দিন ছয়টায় আবার কোন দিন নটায় কিন্তু গুডমর্নিং মেসেজ ঘুম ভাঙ্গার ঠিক পরপরই এসে হাজির হত । 
এমন কোন দিন হয় নি যে আমার ঘুম ভাঙ্গার পরপরই অনীনদিতার কোন এসএমএস আসে নি । 
রিপ্লে তে একটা স্মাইলি পাঠিয়ে দিলাম কেবল । 
অনীনদিতা আবার পাঠাল 
আমার সাথে একটু দেখা করবে ? তোমাকে কত দিন দেখি না । 
কথা সত্য অনীনদিতার সাথে প্রায় ৭ দিন দেখা হয় নি । ঈদের ছুটিতে বাসায় গেছিলাম সেই কবে । কিন্তু এখন অনীনদিতার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছে না । বাসায় গিয়ে একটা গোছল দেওয়াটা খুব বেশি দরকার । লিখে পাঠালাম 
এখন না প্লিজ । 
প্লিজ এক বার । অল্প একটু সময়ের জন্য ! 
আমি মনে মনে হাসলাম । অনীনদিতার একটু সময় মানে ঘন্টা পার হয়ে যাবে । এখন যদি ওর সাথে দেখা করতে যাই তাহলে আমাকে সহজে ছাড়বে না ও । 
আমি লিখে পাঠালাম 
এখন না । 
একটু পর ওর মেসেজ আসল । 
এতো গুলো রাগের ইমো । 
নিচে লেখা 
এখন আমার সাথে আর দেখা করতে ভাল লাগবে না । বাসা থেকে তোর টিয়ার সাথে দেখা করে এসেছিস ! এখন আর আমার দরকার কি ? তুই আর কখন আমার কাছে ফোন দিবি না ! 
আমি অনীনদিতার ছেলেমানুষী দেখে হাসি মনে মনে । মেয়েটা চট করে এমন রেগে যায় ! আর রেগে গেলেই তুই তোকারী শুরু করে দেয় । 
আমি খুব ভাল করে জানি অনীনদিতা একটু পরেই আবার ফোন দিবে । 
একটু কাঁদবে । 
সরি বলবে । 
মেয়েটা এমনই । 
রাগ যেমন চট করে ওঠে আবার চট করেই চলে যায় । 
কিন্তু টিয়া এমন না । টিয়া যদি একবার রেগে যেত তাহলে সেই রাগ ভাঙ্গাতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত ! 
এবার আসলেই টিয়ার সাথে দেখা হয়েছে । কতদিন পর টিয়াকে দেখলাম ! 
অবশ্য টিয়াকে প্রতিবার আমি বেশ সময় ব্যবধানেই দেখি । কিন্তু এবার দেখা হওয়াটা একটু অন্য রকম ছিল । 
প্রতিবারই যখন বাসায় যেতাম টিয়ার সাথে দেখা করার জন্য খুব অস্থির হয়ে যেতাম । কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম যে টিয়ার সাথে যেন দেখা না হয় ! 
এই জন্য আমি ঈদে বাসাও যেতে চাচ্ছিলাম না । কিন্তু বাড়িতে না গেলে কেমন হয় । দেখাটা হয়েছেও খুব অপ্রস্তুত ভাবে । 
বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম আড্ডা মারতে । বাড়ির সামনে বসে আড্ডা মারছিলাম ঠিক তখনই বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি হল । কেমন যেন । লিখে প্রকাশ করা যাবে না । 
কিন্তু প্রতিবার যখন টিয়ার সাথে দেখা হতে যায় ঠিক তখনই এই অনুভূতিটা আমার হয় । আজ এতো দিন পর এই রকম অনুভূতিটা হবে ভেবে একটু অবাকই হলাম । 
অনেক সময় অনুভূতিটা অমূলকও হয় । তবে আজ হল না । গলির ভিতর থেকে টিয়া বের হয়ে গেল । কোলে ওর ভাইয়ের মেয়ে । আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । টিয়া নিজেও অপ্রস্তুত হল । 
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল কেবল নিস্পল চোখে । 
আহা ! 
কতদিন এই চোখ দুটো দেখি না । ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন ঐ চোখ দেখবো না । আমি নিজেও চাচ্ছিলাম না ওর সাথে আমার আর দেখা হোক । 
কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে ? 
আমি ভেবেছিলাম টিয়া আমার সাথে কথা বলবে না । এর আগে যতবার দেখা হয়েছে আমরা চাইলেও কথা বলতে পারতাম না । ওর সাথে আমার একটা পরিচয় আছে কাউকে বুঝতে দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না । 
টিয়া কেবল আমার দিকে তাকিয়েই রইল চুপ করে । ওর মুখটা দেখে আমি আমার বুকের ভিতর কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । কেমন একটা কষ্টের কাঁপন ! 
এই মানুষটাকে দেখার জন্য একটা সময় আমি কি পরিমান অস্থির হয়ে থাকতাম আর এখন কি যে একটা কষ্ট হচ্ছে না এখানে আর থাকা যাবে না । থাকলেই কেবল কষ্ট বাড়বে । 
কেবলই বারবে । 
বন্ধুর কাছে বিদায় নিয়ে হাটা দিলাম । 

আবার ফোন বাজছে । অনীনদিতা ফোন দিয়েছে । আমি মনে মনে হাসলাম । মেয়েটা পাঁচ মিনিটও রাগ ধরে রাখতে পারে নি । 
-কি হল ? ফোন দিবা না বলে ? 
আমি হাসি । 
-একটু আসলে কি হবে ? আমি নিচে নামবো না । বারান্দা দাড়িয়ে দেখবো । 
এই মেয়েটার পাগলামো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে । 
আমি ফোন রেখে দিলাম । সারাটা রাত একদম ঘুম হয়নি । এখন একটা শান্তির ঘুম খুবই দরকার । 

আমি রিক্সায় উঠে পড়লাম । শরীর খুব বিশ্রাম চাইছে কিন্তু মন ? 
মন বলছে অনীনদিতার সাথে একটু দেখা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ? 
ঐ দিনও আমি মনের কথাটাই শুনেছিলাম । যখন ফিরে আসছিলাম খুব চাইলাম যে টিয়ার দিকে ফিরে চাইবো না । 
কিছুতেই চাইবো না । 
কিন্তু না তাকিয়ে পারলাম না । ফিরে চাইতেই হল । টিয়া আমার দিকেই তাকিয়েই ছিল । 
ওর চোখের দিকে তকিয়ে কেমল কষ্টের ফোয়ারাটা আর একটু জোরে বইতে শুরু করল । 
আর কিছু না । 
ঐ দিন যেমন কষ্ট বাড়লেও আমার মন বলছিল ফিরে তাকাতে তাই তাকিয়েছিলাম । 
আজও মনের কথাটাই শুনলাম । 
অনীনদিতার বাড়ির সামনে গিয়ে ফোন দিলাম ওকে । 
-আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ? 
-আবার তুই ? 
-তুই ফোন কেন দিয়েছিস কেন ? যা তুই বাসায় যা । বাসায় গিয়ে ঘুমাগা যা । 
-চলে যাবো ? তোমার বাসার সামনে এসেছিলাম । আচ্ছা যাই ! 
-সত্যি ? 
-হুম । বারান্দায় আসো । দেখতে চেয়েছিলা । দেখো । 
আমি রিক্সায় বসে অনীনদিতার বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই অনীনদিতার দেখা পেলাম । তবে বারান্দায় না গেটে । 
ও এতো জলদি নিচে নেমে এল কিভাবে ? 
অনীনদিতা আমার সামনে এসে দাড়াল । আমার হাত ধরে বলল 
-চল । 
-কোথায় যাবো ? 
-বাসায় চল । 
-এই জন্য কিন্তু আমি আসতে চাই নি । 
-এসেছ কেন ? কে আসতে বলেছে ? 
-অনি ! 
অনীনদিতা বলল চোখ 
-রাঙ্গিয়ে লাভ নাই । চল । 
-একটু বোঝার চেষ্টা কর । এভাবে বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না । 
-না হলে না । 
-দেখো আমি খুব ক্লান্ত । আমার ঘুমানো খুব দরকার । 
-আমার বাসায় বিছানা নাই ? 
আমি আর কোন যুক্তি দেখাতে পারলাম না । আর অনীনদিতা যখন একবার বলেছে আমাকে ওর বাসায় না নিয়ে শুনবে না । যেতেই হল । অনীনদিতা বলল 
-তুমি শাওয়ার নিয়ে আসো আমি তোমার জন্য খাওয়া রেডি করি । 
-এতো সকালে কি করবা ? 
-তুমি যাও তো আমি দেখছি । 

বেশ সময় নিয়ে গোছল করলাম । বাথরুম থেকে বের হয়ে কাপড় পড়লাম । খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি টেবিলে ধোয়া ওঠা ভাত । 
পাশে আলু ভর্তা । 
এতো জলদি ভাত রাধলো কিভাবে মেয়েটা ? 
আমি টেবিলে বসতে বসতে অনীনদিতা ডিম ভাজা নিয়ে এল । বলল 
-আপাতত এই টুকু খেয়ে ঘুম দেও । দুপুরে অনেক কিছু খাওয়াব । 

আমি যখন খাচ্ছিলাম অনীনদিতা আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে ছিল । মুখে ভাতের নলা নেওয়ার সময় কি মনে হল বললাম 
-খাবে ? 
-খাইয়ে দিলে খাবো । 
আমি হাসলাম । ভাতের নলা টুকু ওর মুখে তুলে দিলাম । আর একবার ভাত মাখিয়ে ভাত মুখে তুলে দেবো দেখি ওর চোখে পানি । 
এই মেয়েটা এমন কথায় কথায় কেঁদে ওঠে কেন ? বললাম 
-এখানে কাঁন্নার কি হল ? 
চোখ ভরা জল নিয়ে অনীনদিতা বলল 
-কিছু হয় নি । 
তারপর হাসল । কি অদ্ভুদ সুন্দর সেই হাসি । আমি কেবল তাকিয়ে থাকি । 


টিয়ার যেদিন বিয়ে হয় মনে হয়েছিল বেঁচে থাকার বোধহয় আর কোন কারনই নেই । কিন্তু এখন এই মেয়েটা আমাকে কি ভালবাসাতেই না জড়িয়ে রেখেছে । কি আশ্চার্য ভাবে ! 

Thursday, May 26, 2016

অসাধারণ একটি ভালবাসার গল্প-



রোজ নামে একটি মেয়ে ছিল যে গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করত।।

তার স্বামী তাকে প্রতিটি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে গোলাপের তোড়া পাঠাতো আর সাথে থাকতো একটি করে কার্ড,যেখানে লেখা থাকতো সে তাকে কতোটা ভালবাসে।
...
কিন্তু হঠাত্‍ একদিন রোজের স্বামী মারা যায় ।কিন্তু রোজের স্বামী মারা যাওয়ার এক বছর পরের ভ্যালেন্টাইন্স ডে তেও রোজ একি ভাবে কার্ড সহ গোলাপের তোড়া পেল, কার্ডে লেখা ছিল“আমি গত বছরের এই দিনে তোমাকে যতটুকু ভালবাসতাম, এখন তার থেকে আরও বেশি ভালবাসি। প্রতিটি বছর পার হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তোমার জন্যে আমার এই ভালবাসা আরো বাড়বে”।

রোজ ভাবল, তার স্বামী হয়ত মারা যাওয়ার অনেক আগেই তার জন্যে গোলাপের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল আজকের দিনটির জন্যে। সে মন খারাপ করে ভাবলো এটাই তার শেষ ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া গোলাপের তোড়া। সে ফুলগুলিকে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখল আর তার স্বামীর ছবি দেখেই দিনটি কাটিয়ে দিল।

এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে গেল। এই এক বছর ভালবাসার মানুষটিকে ছাড়া একা একা থাকা রোজের জন্য ছিল খুবই কষ্টের।

ভ্যালেন্টাইন্স ডে এর দিন সকালে তার বাসায় কে জানি বেল বাজালো। সে দরজা খুলে দেখতে পেল দরজার সামনে কার্ডসহ গোলাপের তোড়া রাখা। সে অবাক হয়ে কার্ডটিপড়ে দেখল এটা তার স্বামী পাঠিয়েছে। এবার সে রেগে গেল কেউ তার সাথে মজা করছে ভেবে। সে ফুলের দোকানে সাথেসাথে ফোন করে জানতে চাইলো এই কাজ কে করেছে। দোকানদার তাকে যা বলল তা হল “আমি জানি আপনার স্বামী এক বছর আগে মারা গেছেন, আমি এও জানি আপনি আজকে আমাকে ফোন করে সব জানতে চাইবেন। আপনারস্বামী আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রাখতেন। তিনি অনেক আগেই আমাকে বলে রেখেছিলেন আপনাকে যেন প্রতি ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে আমার দোকান থেকে গোলাপ ফুল পাঠানো হয়।তিনি আগাম টাকা পরিশোধ করে গেছেন। আরওএকটি জিনিষ আছে, যা আপনার জানা দরকার। আপনার স্বামী আমার কাছে আপনার জন্যে একটিবিশেষ কার্ড লিখে রেখে গেছেন, তিনি বলেছিলেন যদি আমি কখনো জানতে পারি যে তিনি মারা গেছেন, শুধু তাহলেই যেন কার্ডটি আপনাকে দেয়া হয়। আমি আপনাকে কার্ডটি পাঠিয়ে দিব”।

রোজ যখন কার্ডটি হাতে পেল তখন সে কাঁপা কাঁপা হাতে কার্ডটি খুলে দেখতে পেল, সেখানে তার স্বামী তার জন্যে কিছু লিখে গেছে। সেখানে লিখা ছিল “আমি জানি আমার চলে যাওয়ার এক বছর পূর্ণ হয়েছে, এই এক বছরে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে সব সময় সুখী দেখতে চেয়েছি, তোমার চোখের পানি নয়। তাই প্রতি বছর তুমি আমার কাছ থেকে ফুল পাবে।
যখনই তুমি ফুলগুলো পাবে, তখন ফুলগুলোকে দেখে আমাদের ভালবাসার কথা মনে করবে, মনেকরবে আমাদের একসাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলোকে। সবসময় হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করবে, আমি জানি এটা অনেক কঠিন হবে তবুও আমি আশাকরি তুমি পারবে। প্রতি বছর তোমাকে গোলাপ পাঠানো হবে একবার করে। তুমি যদি ফুলগুলোকে কোন একদিন না নাও, তাহলে দোকানী সেদিন তোমার বাসায় পাঁচবার যাবে দেখার জন্যে যে তুমি বাইরে গেছো কিনা। শেষবার দোকানী অবশ্যি জানবে তুমি কোথায়। সে তখন ফুলগুলোকে সেখানে পৌছে দিয়ে আসবে যেখানে আর তুমি আবার একবারের মত একসাথে হব চিরদিনের জন্যে। তুমি সবসময় মনে রাখবে আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালবাসি।প্রতিবিম্বে প্রতিবিম্বে শুধুই তুমি।”

***আপনার জীবনে কখনো না কখনো এমন একজন আসে যে আপনার জীবন কে পুরো বদলে দেয় আপনার জীবনের একটা অংশ হয়ে। যে আপনাকে উপলব্ধি করতে শেখায় যে পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।।***

গল্পটি আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করলে এবং ভাল লাগলে লাইক দিন এবং শেয়ার করুন

ভালবাসায় এতো কষ্ট কেন

গোলাপ যদি সুন্দর হয়..........
তবে গাছে তার এতো কাঁটা কেন ?
মণি যদি মুল্যবান হয়...........
তবে বিশাক্ত সাপের মাথায় কেন ?
ভালবাসা যদি সর্গ হয়...........
তাহলে ভালবাসায় এতো কষ্ট কেন ?
*****#তুমি_কেনো_বোঝোনা****

Wednesday, May 25, 2016

একটি ভালবাসার গল্প

১.
এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ করে টানা চার মাস পর ক্যাডেট কলেজ থেকে বাসায় আসলাম। ছুটিতে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা করলাম। কিন্তু বাসায় এসে আমার মাথায় হাত। কারন আমি কলেজে থাকা অবস্থায় আমাদের বাসা চেঞ্জ হয়েছে। নতুন বাসায় এসে কিছুটা অস্বস্তিতে পরলাম। কাউকে চিনিনা। বাসায় এসে কিছুক্ষন ধাতস্ত হওয়ার চেষ্টা করছি, এমন সময় কেউ একজন বলে উঠল-
–      আন্টি……………
একটা মেয়ে দৌড়ে ঘরে এসে ঢুকল। ঢুকেই আমাকে দেখে লজ্জা পেয়ে গেল। আর আমি হা করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। অপূর্ব!!! চোখ ফেরাতে পারছি না। মাথায় সেই বিখ্যাত কবিতা চলে এল-
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ”।
মনে মনে নিজেকে গালাগালি দিলাম তার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকার জন্য। আম্মুকে ডাক দিলাম। আম্মু এসে মেয়েটাকে দেখে খুশি হয়ে গেল।
–      আরে তানিয়া, বাইরে কেন? ভিতরে এস।
–      না, আন্টি। থাক। পরে আসব।
–      আরে আস তো।
মেয়েটা লজ্জাবনত মুখে ঘরে এসে বসল। আমি আম্মুর ভয়ে তার দিকে তাকাতে সাহস পেলাম না। তারপর ও আড় চোখে দেখার চেষ্টা করছিলাম। আম্মু বোধহয় আমার কৌতূহল টের পেয়ে বললেন-
–      ওর নাম তানিয়া। এবার এইচ.এস.সি দেবে। আর ও আমার ছেলে, তুহিন। এইবার এস.এস.সি দিয়ে কলেজ থেকে ছুটিতে এসেছে। (বুঝতে পারলাম আমাকে নিয়ে আগেও কথা হয়েছে)
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে একটা সুন্দর হাসি দিল। আমার হার্ট বিট বেড়ে গেল। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলাম( এত সুন্দর একটা মেয়ে অথচ আমার সিনিয়ার, কেমন রাগ টা লাগে……গররর)
–      তোমরা বসে গল্প কর, আমি একটু আসছি।
আম্মু পাশের ঘরে গেলেন হয়ত কিছু খাবার নিয়ে আসতে। আমি একটু অস্বস্তিতে পড়লাম কি নিয়ে কথা বলব ভেবে। আমার মত সে ও চুপ করে বসে রইল। আমাদের প্রথম পরিচয়ের মুহূর্তটা নিরবতা দিয়েই কাটল।

দুষ্টু ছেলের ভালবাসার গল্প-


প্রতিদিনের মত মোড়ের এই টং দোকানটার কাছে এসেই আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। বদমাইশ 
ছেলেগুলো রোজ একই টাইমে এখানে বসে থাকবে। ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকবে আর মিট-মিট করে হাসবে। দেখে মনে হয় জীবনে কোন মেয়ে মানুষ দেখে নাই। যেন ভিনগ্রহের কোন প্রাণী রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। ইচ্ছে করে প্রত্যেকটার দুই গালে দুটি করে থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞেস করি. তোদের খেয়ে-দেয়ে কাজ নাই? প্রতিদিন এক-ই টাইমে এখানে বসে থাকিস কেন? আমাকে কি এলিয়েন মনে হয়? কিন্তু পারছিনা। প্রতিদিনের মতো আজও দেখেও না দেখার মতো চলে যাচ্ছি।
আজ এমনিতেই মেজাজ গরম। দশ মিনিট দরে দাড়িয়ে থেকেও কোন রিক্সা না পেয়ে হেটে কলেজে যাচ্ছি। রিক্সা ওয়ালারা মনে হচ্ছে আজ কাল প্রাইভেট কার ওয়ালা হয়ে গেছে। এখন তারা রিক্সা চালায় না প্রাইভেট কার চালায়।
---এক্সকিউজ মি আপু।
আমি পিছন ফিরে তাকালাম। টং দোকানের ঐ বদমাইশ গুলোর একটি পিছনে দাড়িয়ে।
---আপু আপনার সাথে আমার একটু কথা ছিলো।
মাথায় এলোমেলো চুল। দেখে মনে হচ্ছে গত দুই সপ্তাহ ধরে মুখের দাড়ি কাটে না।
---কি কথা?
মুখ থেকে একটু আগে খেয়ে আসা সিগারেটের ধোঁয়া বেড়িয়ে আসছে। কপালে ফুটা ফুটা ঘাম। মনে হচ্ছে এই মাত্র দুই মন ওজনের বস্তা নামিয়ে এসেছে মালিকের কাছ থেকে টাকা নেয়ার জন্য।
---আসলে আপু কিভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছিনা।
---বুঝতে পারছেন না তাহলে কথা বলতে আসছেন কেন? মেয়েদের রাস্তায় একা পেলেই কথা বলতে ইচ্ছে করে? পিছন থেকে ডাকতে ইচ্ছে করে?
রাগে আমার শরীর ঘিনঘিন করছে। এই বখাটে ক্ষ্যাতগুলোর যন্ত্রণায় রাস্তায় বেড় হওয়া যায় না। মেয়ে দেখলেই হারামিগুলো ঝাপিয়ে পরতে চায়। টেনে হেছড়ে খেতে চায়।
---আসলে আপু আপনে যা ভাবছেন আমি ঐ রকম নই। আমার নাম সানি।
---আপনার নাম সানি! এটা বলতে এসেছেন? আর আপু আপু করছেন কেন? আমি আপনার কোন জম্মের আপু? শুনুন আপনার মত ছেলেদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে।
---আসলে. . . . না মানে. . . আপু আপনাকে একটা চিরকুট দিতে এসেছি।
---আমাকে চিরকুট দিতে এসেছেন? কিসের চিরকুট?
ছেলেটি আমার সামনে দাড়ানো। মূখ থেকে সিগারেটের দুর্গন্ধ বেড়িয়ে আসছে। এতো বাজে জিনিস মানুষ কিভাবে খায় আমি বুজতে পারি না।সানি আবার আমতা আমতা করে বলছে--
---সরি, কিছু মনে করবেন না। দোকানে যারা বসে আছে তারা আমার ফ্রেন্ড। ওদের সাথে আমি বাজি ধরেছি। যদি আপনাকে আমি এই চিরকুটটি দিতে পারি তাহলে তারা আমাকে কে এফ সি তে খাওয়াবে। প্লিজ আপু অন্য কিছু মনে করবেন না।
ছেলের সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! চিরকুটের দিকে তাকাতেই লিখাটি চোখে পরলো। ওখানে লিখা "I LOVE YOU"। রাগে আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। ঠাস করে গালে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললাম--
---বদমায়েশি করার আর জায়গা পাননা? মেয়ে দেখলেই চিরকুট দিতে ইচ্ছে করে? বাজি ধরতে ইচ্ছে করে? মেয়েদের আপনারা কি মনে করেন? বাজারের পণ্য না জুয়ার দান?
সানি কোন কথা বলছে না। গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রয়েছে। প্রচন্ড অপমানিত হলে মানুষকে যেমন দেখায় ঠিক তেমন লাগছে।
---আপনাদের বংশ পরিচয় নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। ভালো বংশের ছেলেরা তো রাস্তায় দাড়িয়ে মেয়েদের ট্রিকস্ করে না! লজ্জা থাকলে ফের যেন এখানে না দেখি। আর বাজি ধরতে চাইলে আপনার ফ্যামিলির কাউকে নিয়ে ধরুন। রাস্তায় এসে নিজের বংশ পরিচয় দেখাবেন না।
এই ক্ষ্যাতটার সামনে আমার আর দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না। কথা বলতেও ঘৃণা করছে।
আমি আর দাড়ালাম না। পাশেই একটা খালি রিক্সা পেয়ে উঠে পরলাম।
* * * * * * * * * * * * * * * * * * * *

মাঝে মাঝে আমি আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হই। মনে মনে বলি কিরে প্রতিভা তোকে এতো সুন্দর লাগছে কেন? আজ আমার সেরকম কিছু একটা বলতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে অনেক্ষন ধরে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখি। হাসলে কেমন লাগে দেখি, কাঁদলে কেমন লাগে কিংবা অভিমান করলে কেমন লাগে দেখি। কিন্তু বেশিক্ষন নিজেকে দেখতে পারছি না। সময় নেই। কলেজের ফাউন্ডেশন ডে উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। দুপুর দুটার মধ্যে যাওয়ার কথা। এখন বাজে তিনটা। অনেক দেরি করে ফেলেছি। তবু নিজেকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে রেখে কয়েকবার দেখে নিয়েছি।
আজ শাড়ি পরেছি। নীল শাড়ি। কপালে লাল টিপ। দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। যেদিন বেশি সুন্দর লাগে সেদিন বেশি বেশি করে দেখতে ইচ্ছে করে।
--- আপু তুমি এখনো যাওনি? আর কতো সাজো? এমনিতেই তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে। এতো সাজতে হবে না।
আমাকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দেখলেই পূর্ণতার মেজাজ গরম হয়। ছোট বোনটি কেন আমার সাজা দেখতে পারে না বুঝিনা।
---এইতো যাচ্ছি। তুই যাবি আমার সাথে?
---না।আমার যাওয়া লাগবে না। তুমিই যাও। তোমার সাথে গেলে আমাকে কুৎসিত লাগে।
পূর্ণতা দেখতে অনেক সুন্দর। তবু কেন আমাকে এতো হিংসা করে বুঝি না।
---তুই সবসময় আমাকে এতো হিংসে করিস কেন বলতো? আমি কি তোকে কখনো সাজতে নিষেধ করছি?
---ওমা! আমি তোমাকে কখন হিংসে করলাম? তোমাকে সুন্দর লাগছে বলছি বলে হিংসে করা হয়? ঠিক আছে তুমি সাজো। সাজতে সাজতে পেত্নী হও। আমি গেলাম।
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে। মেয়েটাকে একটা কথা বলা যায় না। অমনি রাগ করে। রাগ যেন সবসময় ঠোঁটের কিনারায় এসে থাকে।
বাসা থেকে বেড়িয়ে রিক্সা পেয়ে গেছি। রিক্সার জন্য দাড়িয়ে থাকা অসহ্য লাগে। আজ তেমন লাগছে না। অবশ্য একা একা যেতে ভালো লাগছে না। পূর্ণতা সাথে থাকলে ভালো হতো। দুজনে গল্প করে যেতে পারতাম।
রিক্সা ছুটে চলেছে। বিকেলের স্নিগ্ধ আলো হালকা বাতাসে মিশ্রিত হয়ে গায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। মোড়ের টং দোকানটার কাছে এসে আগের মতো এখন আর মেজাজ গরম হয়না। বদমাইশ ছেলেগুলোকে গত এক সপ্তাহ দরে কলেজ যাবার সময় দেখিনা। একদিনেই জন্মের মতো শিক্ষা হয়ে গেছে। কেউ প্রতিবাদ করে না বলে ওরা মাথায় উঠে। দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের নোংরামি প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
আজ কলেজ অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। মেইন গেইট থেকে শুরু করে পুরো ক্যাম্পাসে লাল নীল তারা বাতি লাগিয়েছে। চারদিকে নতুন নতুন ফুলের টব বসানো। অনেক ছেলেমেয়ে পারফর্ম করবে বলে বাহারি রংয়ের ও ডিজাইনের পোশাক পরে এসেছে। মুখে কড়া মেকাপ। দেখতে অদ্ভুত মনে হচ্ছে।
মাঠের একপাশে বিশাল মঞ্চ তৈরী করা হয়েছে। যেখানে এইমাত্র একটি ছেলে ও একটি মেয়ে চমৎকার নিত্য উপহার দিয়েছে। দেখতে খুব মজা লাগছে। এখন একটি ছেলে এসেছে গান গাইতে। বাড়ি মিষ্টি গলা।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাসায় ফিরতে হবে। সন্ধ্যার পরে বাহিরে থাকলে আম্মু ভিশন টেনশন করে। কখনো সন্ধ্যার পরে একা বাহিরে থাকতে পারি না। রাত করে বাসার ফিরলে অনেক বকা খেতে হয়। আমার সাথে আমার দুই ক্লাসমেট। নীলা ও শিখা। মাঝে মাঝে ওদেরকে দেখে আমার প্রচন্ড হিংসে হয়। ওরা যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারে। যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। রাত দশটার পর বাসায় ফিরলেও কেউ কিছু বলে না।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় ওদের মতো হই। মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়ে বেড়াই। কিন্তু পারিনা। আমার মেন্টালিটি আমাকে বাধা দেয়। আমার সোসাইটি আমাকে বাধা দেয়।
বিকেল থেকে বসে আছি। অনুষ্ঠান ছেড়ে একটুও উঠতে ইচ্ছে করছে না। প্রত্যেকের প্রেজেন্টেশনই অনেক ভালো লাগছে। কিন্তু আর থাকতে পারছি না। সন্ধ্যা পেরিয়েছে অনেক্ষন আগে।
---নীলা-শিখা আমি যাইরে। আর থাকতে পারছি না।
---এখনই চলে যাবি? আর একটু থাক।
---নারে আম্মু অনেক টেনশন করবে।
ইচ্ছে থাকা সত্যেও আমি প্রগ্রামে থাকতে পারছি না। নীলা-শিখার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলাম। বাহিরে আধো আলো আধো ছায়া। আকাশে মধ্য বয়সি চাঁদ জোছনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। শেষ কবে একা একা জোছনা রাতে রিক্সা করে বাসায় ফিরেছি মনে নেই। ভাবতেই ভালো লাগছে।
রাস্তা মনে হচ্ছে জনমানব শুন্য। কোথাও কেউ নেই অবস্থা। ইদানিং কি যে হলো সন্ধ্যার পরে কেউ ঘর থেকে বের হয়না। সবার মাঝে আতংক বিরাজ করে। কি হয় কি হয় অবস্থা। কখন কোথায় আগুন দিচ্ছে বোমা মারছে বলা যায়না। আমাদের এই মানুষ মারার রাজনীতি কবে যে বন্ধ হবে আল্লাহ জানে। হঠাৎ হঠাৎ অবশ্য রাস্তায় দুই-এক জনকে দেখা যাচ্ছে। দেখে মনে হয় খুব জরুরী কাজে বের হয়েছে।
মোড়ের টং দোকানটার বেতরে দোকানি ছেলেটা বসে আছে। আশপাশে কেউ নেই। দেখে মনে হচ্ছে নিঃসঙ্গ কোন একটি গ্রহে একটি প্রাণীর বাস।
দূর থেকে আলো ফেলে একটি মটরসাইকেল ছুটে আসছে। হেড লাইটের আপার পজিশন দিয়ে আলো আসছে। সম্পূর্ণ আলো আমার এবং রিক্সা ওয়ালার চোখে পরেছে। পিছনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কাছে এসেই হুড়মুড় করে বাইকের পিছন থেকে দুটি লোক নেমে এসে রিক্সার দুই দিক থেকে আমাকে ঘিয়ে ধরেছে। আতংকে, ভয়ে আমি সজোরে চিৎকার দিয়ে উঠেছি। রিক্সা ওয়ালা রিক্সা ফেলে ভয়ে পালিয়েছে। একজন আমাকে রিক্সা থেকে হেছকা টান দিয়ে নামিয়ে নাক মুখ একহাতে চেপে ধরেছে যেন মনে হচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যাবো। অন্য হাতে একটি চাকু পেটের কাছে এমন ভাবে চেপে ধরেছে যেন অর্ধেকটা পেটে ডুকে গেছে। ভয়ে যন্ত্রণায় আমার সারা শরীর থর থর করে কাপছে। একটুও নড়তে পারছি না। আমাকে ধরে রাখা লোকটা কন্ঠকে ভয়ংকর করে বললো--
---চিৎকার করবি তো জানে মেরে ফেলবো।
আমি চিৎকার করতে পারছি না। নড়াচড়া করতে পারছি না। অন্য লোকটা আমার গলার সোনার চেইন, কানের দোল খুলতে লাগলো। ভয়ে আতংকে আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। হঠাৎ ধুম করে একটা শব্দ হওয়ার সাথে সাথে আমাকে ধরে রাখা লোকটা "আহহ" করে চিৎকার দিয়ে আমাকে ছেড়ে দুহাতে মাথায় হাত চেপে ধরেছে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথা থেকে ছুটে আসা ছেলেটি অন্য জনের নাক বড়াবড় হাতে রাখা ইট দিয়ে মেরেছে। আমি অনুভব করলাম আমার নাকে মুখে হালকা গরম তরল এসে পরেছে। মুহুর্তের মাঝে কি হলো বুঝতে পারছি না। সবকিছু কেমন সিনেম্যাটিক লাগছে।
বাইকে বসে থাকা অপর ছিনতাইকারী মনে হয় প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। তাড়াতাড়ি পালাতে চাইলো। বাইক স্টার্ট দেয়ার সাথে সাথে হেড লাইটে আলো এসে পরেছে আমাদের গায়ে। আগন্তুক ছেলেটিকে চেনা গেলো। সানি। আমাকে চিরকুট দিয়ে থাপ্পড় খাওয়া সানি। আঘাত পাওয়া লোক দুটি বাইকের কাছে ছুটে গেলে।
আমি মুর্তির মতো দাড়িয়ে রয়েছি। কিছুই বলতে পারছি না।
মনে হয় সানি আঘাত পেয়েছে। বাম হাতের কব্জির উপর থেকে রক্ত পরছে। ওর সেই দিকে কোন খেয়াল নেই। বুঝা যাচ্ছে আমাকে দেখে সে হতভম্ব।
---আপনার মনে হয়ে কব্জির উপরে কেটে গেছে।
আমি আস্তে আস্তে সানিকে বললাম। সানি ক্ষত হাতটি অপর হাত দিয়ে টেনে দেখছে। মনে হচ্ছে অনেকখানি কেটে গেছে। আমি কাছে গিয়ে দাড়ালাম। কাটা স্থানের রক্তে পরনের সাদা টি শার্টের অনেকটা ভিজে গেছে। হাত দিয়ে দেখতে চাইলাম কতোটুক কেটেছে।
---এ কিছু না। আপনার কিছু হয়নি তো?
আমি ওর রক্ত ভেজা বাহু স্পর্শ করতে করতে বললাম--
---না আমার কিছু হয়নি। আপনার অনেকটা কেটে গেছে আসুন কিছু দিয়ে বেধে দেই।
---লাগবেনা। এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে। চলুন আপনাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি। আর আপনার মুখে মনে হয় রক্ত লেগেছে, ওটা মুছে নিন।
আমি কিছু বলতে পারলাম না। সেদিনের থাপ্পড় খেয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখা মুখটি চোখের সামনে বেশে উঠলো।

আমি সানির পিছন পিছন হাটছি। লজ্জায় অনুশোচনায় আমি কোন কথা বলতে পারছি না। নিজেকে আমার প্রচন্ড ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে।
* * * * * * * * * * * * * * * * * * *
দুইদিন ধরে বাসা থেকে বের হতে পারছি না। কলেজ বন্ধ ছিলো। সেই ঘটনার পর থেকে আম্মুর কড়া নির্দেশ কলেজ ছাড়া বাসার বাহিরে যাওয়া যাবে না।
আজ কলেজ খুলেছে। আম্মুকে বলে কলেজে যাবার জন্য বাসা থেকে বেড়িয়ে এলাম। আসতে দিতে চায়নি। আরো কয়েক দিন বাসায় রেস্ট নিতে বলেছে। আমি শুনিনি।
রাস্তার একপাশ ধরে হাটছি। আমাকে সানির সাথে দেখা করতেই হবে। সেই দিন লজ্জায় সরি টাও বলতে পারিনি। নিজেকে প্রচন্ড ঘৃণা করতে ইচ্ছে করছে। সানির সাথে বাজে ব্যাবহারের জন্য প্রত্যেকটি মুহুর্ত আমার সত্তা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমাকে একটি বারের জন্যও শান্তি দিচ্ছে না সানির করুণ অপমানিত মুখ। চোখের সামনে বারবার বেসে আসছে হাতে ধরা চিরকুটের লিখা "I LOVE YOU"। প্রত্যেকটি মুহুর্ত ইচ্ছে করছে চিরকুটটি নিয়ে মায়ার পরশ ভোলাতে। ভালবাসায় বুকের আলিংগনে জড়াতে।
মোড়ের টং দোকানটার কাছে এসে চার দিকে চোখ ভুলিয়ে দেখছি। কোথাও সানির দেখা নেই। থাকার কথাও নয়। তাকে আর টং দোকানটির দ্বারে কাছে দেখিনা। আমি তীর্থের কাকের মতো এদিক সেদিন খুজছি। যদি পাওয়া যায় সেই আশায়।
---আফা আমি আপনারে খুছতেছি।
টং দোকানের ছেলেটি শব্দ করে বললো। আমি ছেলেটির কাছে গেলাম আগ্রহ নিয়ে কিছু একটা শোনার জন্য।
---আফা সানি ভাই আপনেরে এই খামটি দিছে।
আমি খামটি হাতে নিলাম। নিজেকে কেমন জানি শুণ্য মনে হচ্ছে। খামের ভেতরের একটি নীল রংয়ের চিঠিটি।
প্রতিভা,
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে আর কখনো কাউকে কিছু লিখাবো না। তবু সেই আপনাকে লিখতে হচ্ছে। সেই জন্যে সরি।
আমি আমার বাবা মার একমাত্র সন্তান। ভালো ছাত্র ছিলাম। ছোট বেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো জীবনে অন্যরকম কিছু একটা করবো। সবার চেয়ে আলাদা। সেই ইচ্ছে কে মুঠোয় আনার জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলো না। কিন্তু আমি পারিনি। আমার ফ্যামিলি আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দেইনি। আশ্চর্য হচ্ছেন? আশ্চর্য হবার-ই কথা।
আমি হবার পর আব্বু আম্মুর দশ বছর চলে গেছে তাদের আর কোন সন্তান হয়নি। আব্বুর অনেক আশা ছিল তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে থাকবে। যে কি না সারা বাড়ি আলো করে রাখবে। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। এই নিয়ে আব্বু আম্মুর সাথে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আব্বু আম্মুকে পেইন দিতো তার প্রব্লেম বলে। আর আম্মু আব্বুকে। মাঝে মাঝে এ নিয়ে প্রচন্ড ঝগড়া হতো দুজনের মাঝে। এমনকি আব্বু আম্মুর গায়েও হাত তুলেতো।
দুজনের ঝগড়া দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। এটা আমি মানতে পারতাম না। আমার অনেক খারাপ লাগতো। যার কারণে বাসার চেয়ে বাহিরেই বেশি ভালো লাগতো। বাহিরে এসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালো লাগতো। হইহল্লো করে সময় কাটাতে ভালো লাগতো। বন্ধুদের পাল্লাই পরে সিগেরেট খেয়ে সবকিছু ভুলে থাকতাম। এসব করতে করতে কখন যে সেই স্বপ্নবোনা ছেলেটি সমাজের বখাটে, অমানুষ, বদমাইশ হয়ে গেছে নিজেই জানি না।
আপনাকে সেদিন চিরকুটটি দেয়ার পর নিজের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা জন্মেছিলো। নিজেকে রাস্তার কুকুর মনে হচ্ছিলো। আপনাকে অনেক দিন ধরে দোকানে বসে দেখতাম। অনেক ভালো লাগতো। অনেক স্বপ্ন দেখতাম আপনাকে নিয়ে। নিজের দিকে তাকিয়ে আমার স্বপ্নকে প্রত্যেকবার খেলা ঘরে মতো ভেঙ্গে দিয়েছি। সত্যি কথা কি জানেন সেদিন শুধু বাজিতে জেতার জন্য চিরকুটটি আপনাকে দিতে চাইনি। আমি চেয়েছিলাম অন্তত বাজির মাধ্যমে হলেও আমার মনের লিখাটি আপনাকে দেখায়। হয়তো মিছেমিছি ছিলো। তবুওতো বলতে পেরেছি।
গতকাল আব্বু আম্মুর সাথে প্রচন্ড ঝগড়া হয় এবং তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। আমি আম্মুকে নিয়ে চলে যাচ্ছি দূরে কোথাও। যেখানে আব্বুর মতো মানুষ থাকবে না। চেষ্টা করবো আম্মুকে অনেক অনেক সুখি রাখতে। জানি আব্বু ছাড়া এটা কখনো সম্ভব না। যতই ঝগড়া করুন না কেন আম্মুতো আব্বুকে প্রচন্ড ভালোবাসতো।
আর কখনো আপনার সাথে আমার দেখা হবে না। একদিকে ভালোই হয়েছে। অন্তত একজন বখাটে, বদমাইশ আপনার এলাকায় কমেছে। আমার কি মনে হয় জানেন সমাজের প্রত্যেকটি বখাটে বা খারাপ ছেলেদের পেছনে এমন কিছু একটা আছে। হয়তো আমার মতো নয় অন্যরকম।