Friday, May 27, 2016

Love story-



গাবতলীতে নেমে রিক্সা ঠিক করছি এই সময়ে অনীনদিতার এস এম এস এসে হাজির । 
চলে এসেছ ? 
আমি মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারি না এই মেয়েটার আচরনে । এই মেয়েটাকে কখনও কিছু বলতে হয় না । কিভাবে জানি সব কিছু টের পেয়ে যায় । 
প্রতিদিন সকাল বেলা যখন আমার ঘুম ভাঙ্গে ঠিক তখনই অনীনদিতার গুডমর্নিং এসে হাজির হয় । এমন না যে প্রতিদিন আমার ঘুম একই সময় ভাঙ্গত । কোন দিন ছয়টায় আবার কোন দিন নটায় কিন্তু গুডমর্নিং মেসেজ ঘুম ভাঙ্গার ঠিক পরপরই এসে হাজির হত । 
এমন কোন দিন হয় নি যে আমার ঘুম ভাঙ্গার পরপরই অনীনদিতার কোন এসএমএস আসে নি । 
রিপ্লে তে একটা স্মাইলি পাঠিয়ে দিলাম কেবল । 
অনীনদিতা আবার পাঠাল 
আমার সাথে একটু দেখা করবে ? তোমাকে কত দিন দেখি না । 
কথা সত্য অনীনদিতার সাথে প্রায় ৭ দিন দেখা হয় নি । ঈদের ছুটিতে বাসায় গেছিলাম সেই কবে । কিন্তু এখন অনীনদিতার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করছে না । বাসায় গিয়ে একটা গোছল দেওয়াটা খুব বেশি দরকার । লিখে পাঠালাম 
এখন না প্লিজ । 
প্লিজ এক বার । অল্প একটু সময়ের জন্য ! 
আমি মনে মনে হাসলাম । অনীনদিতার একটু সময় মানে ঘন্টা পার হয়ে যাবে । এখন যদি ওর সাথে দেখা করতে যাই তাহলে আমাকে সহজে ছাড়বে না ও । 
আমি লিখে পাঠালাম 
এখন না । 
একটু পর ওর মেসেজ আসল । 
এতো গুলো রাগের ইমো । 
নিচে লেখা 
এখন আমার সাথে আর দেখা করতে ভাল লাগবে না । বাসা থেকে তোর টিয়ার সাথে দেখা করে এসেছিস ! এখন আর আমার দরকার কি ? তুই আর কখন আমার কাছে ফোন দিবি না ! 
আমি অনীনদিতার ছেলেমানুষী দেখে হাসি মনে মনে । মেয়েটা চট করে এমন রেগে যায় ! আর রেগে গেলেই তুই তোকারী শুরু করে দেয় । 
আমি খুব ভাল করে জানি অনীনদিতা একটু পরেই আবার ফোন দিবে । 
একটু কাঁদবে । 
সরি বলবে । 
মেয়েটা এমনই । 
রাগ যেমন চট করে ওঠে আবার চট করেই চলে যায় । 
কিন্তু টিয়া এমন না । টিয়া যদি একবার রেগে যেত তাহলে সেই রাগ ভাঙ্গাতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হত ! 
এবার আসলেই টিয়ার সাথে দেখা হয়েছে । কতদিন পর টিয়াকে দেখলাম ! 
অবশ্য টিয়াকে প্রতিবার আমি বেশ সময় ব্যবধানেই দেখি । কিন্তু এবার দেখা হওয়াটা একটু অন্য রকম ছিল । 
প্রতিবারই যখন বাসায় যেতাম টিয়ার সাথে দেখা করার জন্য খুব অস্থির হয়ে যেতাম । কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম যে টিয়ার সাথে যেন দেখা না হয় ! 
এই জন্য আমি ঈদে বাসাও যেতে চাচ্ছিলাম না । কিন্তু বাড়িতে না গেলে কেমন হয় । দেখাটা হয়েছেও খুব অপ্রস্তুত ভাবে । 
বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম আড্ডা মারতে । বাড়ির সামনে বসে আড্ডা মারছিলাম ঠিক তখনই বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভুতি সৃষ্টি হল । কেমন যেন । লিখে প্রকাশ করা যাবে না । 
কিন্তু প্রতিবার যখন টিয়ার সাথে দেখা হতে যায় ঠিক তখনই এই অনুভূতিটা আমার হয় । আজ এতো দিন পর এই রকম অনুভূতিটা হবে ভেবে একটু অবাকই হলাম । 
অনেক সময় অনুভূতিটা অমূলকও হয় । তবে আজ হল না । গলির ভিতর থেকে টিয়া বের হয়ে গেল । কোলে ওর ভাইয়ের মেয়ে । আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । টিয়া নিজেও অপ্রস্তুত হল । 
কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইল কেবল নিস্পল চোখে । 
আহা ! 
কতদিন এই চোখ দুটো দেখি না । ভেবেছিলাম হয়তো আর কোন দিন ঐ চোখ দেখবো না । আমি নিজেও চাচ্ছিলাম না ওর সাথে আমার আর দেখা হোক । 
কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে ? 
আমি ভেবেছিলাম টিয়া আমার সাথে কথা বলবে না । এর আগে যতবার দেখা হয়েছে আমরা চাইলেও কথা বলতে পারতাম না । ওর সাথে আমার একটা পরিচয় আছে কাউকে বুঝতে দেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না । 
টিয়া কেবল আমার দিকে তাকিয়েই রইল চুপ করে । ওর মুখটা দেখে আমি আমার বুকের ভিতর কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম । কেমন একটা কষ্টের কাঁপন ! 
এই মানুষটাকে দেখার জন্য একটা সময় আমি কি পরিমান অস্থির হয়ে থাকতাম আর এখন কি যে একটা কষ্ট হচ্ছে না এখানে আর থাকা যাবে না । থাকলেই কেবল কষ্ট বাড়বে । 
কেবলই বারবে । 
বন্ধুর কাছে বিদায় নিয়ে হাটা দিলাম । 

আবার ফোন বাজছে । অনীনদিতা ফোন দিয়েছে । আমি মনে মনে হাসলাম । মেয়েটা পাঁচ মিনিটও রাগ ধরে রাখতে পারে নি । 
-কি হল ? ফোন দিবা না বলে ? 
আমি হাসি । 
-একটু আসলে কি হবে ? আমি নিচে নামবো না । বারান্দা দাড়িয়ে দেখবো । 
এই মেয়েটার পাগলামো দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে । 
আমি ফোন রেখে দিলাম । সারাটা রাত একদম ঘুম হয়নি । এখন একটা শান্তির ঘুম খুবই দরকার । 

আমি রিক্সায় উঠে পড়লাম । শরীর খুব বিশ্রাম চাইছে কিন্তু মন ? 
মন বলছে অনীনদিতার সাথে একটু দেখা করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে ? 
ঐ দিনও আমি মনের কথাটাই শুনেছিলাম । যখন ফিরে আসছিলাম খুব চাইলাম যে টিয়ার দিকে ফিরে চাইবো না । 
কিছুতেই চাইবো না । 
কিন্তু না তাকিয়ে পারলাম না । ফিরে চাইতেই হল । টিয়া আমার দিকেই তাকিয়েই ছিল । 
ওর চোখের দিকে তকিয়ে কেমল কষ্টের ফোয়ারাটা আর একটু জোরে বইতে শুরু করল । 
আর কিছু না । 
ঐ দিন যেমন কষ্ট বাড়লেও আমার মন বলছিল ফিরে তাকাতে তাই তাকিয়েছিলাম । 
আজও মনের কথাটাই শুনলাম । 
অনীনদিতার বাড়ির সামনে গিয়ে ফোন দিলাম ওকে । 
-আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভাল লাগে তাই না ? 
-আবার তুই ? 
-তুই ফোন কেন দিয়েছিস কেন ? যা তুই বাসায় যা । বাসায় গিয়ে ঘুমাগা যা । 
-চলে যাবো ? তোমার বাসার সামনে এসেছিলাম । আচ্ছা যাই ! 
-সত্যি ? 
-হুম । বারান্দায় আসো । দেখতে চেয়েছিলা । দেখো । 
আমি রিক্সায় বসে অনীনদিতার বারান্দার দিকে তাকিয়ে রইলাম । কিছুক্ষনের মধ্যেই অনীনদিতার দেখা পেলাম । তবে বারান্দায় না গেটে । 
ও এতো জলদি নিচে নেমে এল কিভাবে ? 
অনীনদিতা আমার সামনে এসে দাড়াল । আমার হাত ধরে বলল 
-চল । 
-কোথায় যাবো ? 
-বাসায় চল । 
-এই জন্য কিন্তু আমি আসতে চাই নি । 
-এসেছ কেন ? কে আসতে বলেছে ? 
-অনি ! 
অনীনদিতা বলল চোখ 
-রাঙ্গিয়ে লাভ নাই । চল । 
-একটু বোঝার চেষ্টা কর । এভাবে বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না । 
-না হলে না । 
-দেখো আমি খুব ক্লান্ত । আমার ঘুমানো খুব দরকার । 
-আমার বাসায় বিছানা নাই ? 
আমি আর কোন যুক্তি দেখাতে পারলাম না । আর অনীনদিতা যখন একবার বলেছে আমাকে ওর বাসায় না নিয়ে শুনবে না । যেতেই হল । অনীনদিতা বলল 
-তুমি শাওয়ার নিয়ে আসো আমি তোমার জন্য খাওয়া রেডি করি । 
-এতো সকালে কি করবা ? 
-তুমি যাও তো আমি দেখছি । 

বেশ সময় নিয়ে গোছল করলাম । বাথরুম থেকে বের হয়ে কাপড় পড়লাম । খাবার টেবিলে গিয়ে দেখি টেবিলে ধোয়া ওঠা ভাত । 
পাশে আলু ভর্তা । 
এতো জলদি ভাত রাধলো কিভাবে মেয়েটা ? 
আমি টেবিলে বসতে বসতে অনীনদিতা ডিম ভাজা নিয়ে এল । বলল 
-আপাতত এই টুকু খেয়ে ঘুম দেও । দুপুরে অনেক কিছু খাওয়াব । 

আমি যখন খাচ্ছিলাম অনীনদিতা আমার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে ছিল । মুখে ভাতের নলা নেওয়ার সময় কি মনে হল বললাম 
-খাবে ? 
-খাইয়ে দিলে খাবো । 
আমি হাসলাম । ভাতের নলা টুকু ওর মুখে তুলে দিলাম । আর একবার ভাত মাখিয়ে ভাত মুখে তুলে দেবো দেখি ওর চোখে পানি । 
এই মেয়েটা এমন কথায় কথায় কেঁদে ওঠে কেন ? বললাম 
-এখানে কাঁন্নার কি হল ? 
চোখ ভরা জল নিয়ে অনীনদিতা বলল 
-কিছু হয় নি । 
তারপর হাসল । কি অদ্ভুদ সুন্দর সেই হাসি । আমি কেবল তাকিয়ে থাকি । 


টিয়ার যেদিন বিয়ে হয় মনে হয়েছিল বেঁচে থাকার বোধহয় আর কোন কারনই নেই । কিন্তু এখন এই মেয়েটা আমাকে কি ভালবাসাতেই না জড়িয়ে রেখেছে । কি আশ্চার্য ভাবে ! 

No comments:

Post a Comment